বহুল বিতর্কিত মুসলিমবিরোধী নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস করে ভারত যেভাবে বহুজাতির একটি দেশে ধর্মীয় বিভক্তি ও এক জাতির হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগুন জ্বেলেছে সেই আগুন বাংলাদেশের গায়েও লাগবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অ্যামিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, ‘প্রতিবেশীর গায়ে আগুন লাগলে সে আগুন আমাদের গায়েও লাগবে। আমাদের এই উপমহাদেশ কখনোই এক জাতির দেশ ছিল না। ভারতবর্ষ সবসময়ই বহুজাতির দেশ ছিল। ভারতে বাঙালি, আসামি, কাশ্মিরি কখনোই এক জাতি না। ভারতের মূল সমস্যা হচ্ছে শ্রেণিগত। তবে শ্রেণিগত সমস্যাটা চাপা পড়ে গিয়েছিলো জাতিগত সমস্যার অভ্যন্তরে।’
‘ভারত এখন চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে আছে। সেই সংকট থেকে মানুষের দৃষ্টি ফেরাতে, মানুষকে বিভক্ত ও বিপথগামী বিজেপি সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস করেছে’- যোগ করেন সিরাজুল ইসলাম।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে গণসংহতি আন্দোলনের উদ্যোগে ‘ভারতের এনআরসি এবং সিএএ দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব ও বাংলাদেশের করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
প্রবীণ এই শিক্ষক ভারতবর্ষ প্রসঙ্গে আরও বলেন, ‘এদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় বলেছিল, ভারতে কম করে হলেও ১৭টি জাতিসত্তার লোক রয়েছে। প্রতিটি জাতিসত্তার প্রত্যেকেরই আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার থাকবে। তারা সকলেই একসাথে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়বে।’
পাকিস্তান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান কমপক্ষে পাঁচটি জাতির সমন্বয়ে একটি কারাগার নামক রাষ্ট্র ছিল। সেখানে পাঞ্জাবি, বাঙালি, বেলুচ, সিন্ধি পাঠান আছে। বাংলাদেশ সেই কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছে। এখন আমরা দেখছি, পাকিস্তানে বিশেষ করে বেলুচরা আন্দোলন করছে এই কারাগার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারতকে কংগ্রেস এক জাতির দেশ বলেছিল। তার প্রতিক্রিয়ায় মুসলিম লীগ বলেছিল ভারত দুই জাতির দেশ। কিন্তু ভারত এক জাতি বা দুই জাতি নয়, বহুজাতির দেশ। সেটাই এখন প্রমাণিত হচ্ছে এবং ভারতকে এটা স্বীকার করে নিতে হবে। ভারত জাতিসমূহের কারাগারে পরিণত হয়ে কখনোই টিকে থাকতে পারবে না। এখন যেটা হচ্ছে, এই কারাগার ভেঙে বিভিন্ন জাতিসমূহ বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।’
ভারতের এনআরসি’র কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভারতকে হিন্দু রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা কেন এখন করা হচ্ছে? এটা করা হচ্ছে মূলত অর্থনৈতিক কারণে। ভারত এখন চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে আছে। সেই সংকট থেকে মানুষের দৃষ্টি ফেরাতে, মানুষকে বিভক্ত ও বিপথগামী করতেই এই আয়োজন।’
পুঁজিবাদের সংকট প্রসঙ্গে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘এ সংকট শুধু ভারতেই নয়, সারা বিশ্বেই বর্তমানে চলছে। পুঁজিবাদ এখন তার চরম বিপর্যয়ের জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। সেই জন্যই পুঁজিবাদ নানা রকম বিভাজনকে কাজে লাগাচ্ছে টিকে থাকার জন্য। পুঁজিবাদ বর্ণের বিভাজন, উগ্র জাতীয়তাবাদের বিভাজন, জাতিগত সত্তার বিভাজন সৃষ্টি করছে। আজকে সারা বিশ্বের মানুষ এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে ভাঙার চেষ্টা করছে।’
গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘বাংলাদেশের সরকার ভারতের এনআরসি এবং সিএএ-কে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলছে। কিন্তু এটা কখনোই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। এই বিষয়ের অভিঘাত দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে, এমনকি বিশ্বব্যাপী, বাংলাদেশি এই অভিঘাত বেশি হবে। বাংলাদেশের সীমান্তে ইতোমধ্যে ভারত থেকে মানুষ আসা শুরু হয়েছে। তাতে করে বাংলাদেশে বড় ধরনের শরণার্থী সঙ্কটে পড়তে পারে। ভারতে ঠিক যেমন উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির তৎপরতা সামনে আসছে, বাংলাদেশেও এমন একটা উগ্র সাম্প্রদায়িক তৎপরতা বৃদ্ধি পেতে পারে। সেই সুযোগে বাংলাদেশের উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ চালাতে পারে।’
চল্লিশ বছর আগে একজন জেনারেলকে হত্যার এক মামলা থেকে জেনারেল এরশাদকে অব্যাহতি
বাংলাদেশে চল্লিশ বছর আগে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর একজন জেনারেলকে হত্যার এক মামলা থেকে প্রয়াত প্রেসিডেন্ট এরশাদকে অব্যাহতি...
Discussion about this post