জসিম উদ্দীন
মেজর (অবঃ) সিনহা মোঃ রাশেদ হত্যা মামলায় কারাগারে থাকা বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ কোটি কোটি টাকা টেকনাফে থেকে দেশেবিদেশে পাচার করেছেন এই দু’জন। পাশাপাশি
সময়মতো পাচার করতে না পারায় পাচারকারী বিভিন্ন জনের কাছেও প্রদীপের কোটি কোটি টাকা রয়েগেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
এখন মানুষের হাতে হাতে থাকা এসব টাকা উদ্ধারের জন্য নীরবে তৎপরতা চালাচ্ছে প্রদীপের স্ত্রী চুমকির প্রতিনিধি ও তার স্বজনেরা।
উড়ো খবর বেরিয়েছে আত্মগোপনে থাকা প্রদীপের স্ত্রী চুমকি বা প্রদীপের বিশ্বস্ত কয়েকজন প্রতিনিধি এখন কক্সবাজারে অবস্থান করছে।তারা টেকনাফের দুইজন গরু ব্যবসায়ীর কাছ ২০ কোটি টাকা উদ্ধারের তৎপরতা চালাচ্ছে বলে জানাগেছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে,এ দুজন ব্যবসায়ী হলেন, টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আবু ছৈয়দ ও সাবরাং ইউনিয়নের পরিষদের মোঃ শরিফ মেম্বার প্রকাশ শরিফ বলি। দুইজনই দক্ষিণ চট্রগ্রামের নাম করা গরু ব্যবসায়ী।
গরু ব্যবসায়ী আবু ছৈয়দ ও শরিফ বলি টেকনাফের বেশিরভাগ মানুষের কাছে ওসি প্রদীপের ব্যবসায়ীক পার্টনার ও টাকা পাচারকারী হিসেবে সর্বত্র পরিচিত।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর প্রদীপ আত্মসমর্পণ করে কারাগারে গেলে।আবু ছৈয়দ ও শরিফ বলি দুইজনই আত্মগোপনে চলে যান। তবে সাম্প্রতিক তারা দুইজনই এলাকায় ফিরে এসেছেন।
অভিযোগ উঠেছে, আবু ছৈয়দ ও মোঃ শরিফ টেকনাফ থেকে প্রদীপের শত কোটি টাকা পাচার করতে মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে। বিনিময়ে তারাও কোটি কোটি টাকা পেয়েছেন। ধারনা করা হচ্ছে ওসি প্রদীপ পাচারের জন্য দেয়া সর্বশেষ দেয়া ২০কোটি টাকা তারা দুইজনই আত্মসাৎ করেছেন।
এখন তাদের কাছ থেকে এসব টাকা উদ্ধার করতে মাঠে নেমেছে প্রদীপ বা চুমকি বাহিনী।
সূত্রে জানাগেছে,প্রদীপ টেকনাফে থাকাকালীন ক্রসফায়ার বাণিজ্য ও নানান পন্থায় অবৈধভাবে আয় করা কোটি কোটি টাকা প্রতিদিন একজন কনেস্টবলের মাধ্যমে আবু ছৈয়দ ও শরিফের কাছে জমা রাখতেন।
প্রদীপের নির্দেশ মতে এসব টাকা পাচারের সুবিধার্থে ছৈয়দ ও শরিফ প্রতি সপ্তাহে মিয়ানমার থেকে বাচাই করা বড় সাইজের শত শত গরু আমদানি করতেন।পরে গরু গুলো ট্রাকে করে চট্রগ্রামের বিভিন্ন হাটে নিয়েগিয়ে পাইকারী ধরে বিক্রি করে দিতেন। এর পর গরু বিক্রির সম্পূর্ণ টাকায় প্রদীপের প্রতিনিধির হাতে হস্তান্তর করতেন এ দুই ব্যবসায়ী।
স্থানীয়দের জানিয়েছেন,প্রদীপ আমলে টেকনাফ থেকে ট্রাকে করে প্রতি সপ্তাহে অন্ততপক্ষে ৫ শতাধিক গরু চট্রগ্রামে নিয়ে গিয়ে পানির দামে বিক্রি করতেন তারা দুইজন। তবে প্রদীপ জেলে যাবার পর থেকে তাদের এ কাণ্ড বন্ধ হয়েগেছে।
টেকনাফের বাসিন্দা মোঃ রাহাতসহ কয়েকজন জানান,আবু ছৈয়দ ও শরিফ গরু ব্যবসার নামে প্রদীপের কোটি কোটি টাকা কারও কারও মতে শত শত কোটি টাকা পাচার করেছেন। তাই তাদের কাছে প্রদীপের ২০ কোটি টাকা থাকবে এইটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। হয়তো এসব টাকার জন্য এ দুইজনকে খুঁজছে প্রদীপের স্বজনেরা।
টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর বলেন, টেকনাফের আবু ছৈয়দ মেম্বার ও শরিফ মেম্বার প্রকাশ শরিফ বলিকে জিঙ্গাসাবাদ করলে ওসি প্রদীপের শত শত কোটি টাকার সন্ধান পাবে দুদক।তারা জানেন প্রদীপ কোথায় টাকা পাচার করেছেন।
তার দাবি, এই দুইজন বিশেষ করে আবু ছৈয়দ মেম্বার গরু ব্যবসার নামে প্রদীপের কমপক্ষে ১০০কোটি টাকা চট্রগ্রামে প্রদীপের প্রতিনিধির হাতে পৌঁছে দিয়েছেন।যা তদন্ত করলে বের হয়ে আসবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত গরু ব্যবসায়ী আবু ছৈয়দ মেম্বার সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,তিনি এ ধরনের কোন কাজে জড়িত ছিলেন না। তাই প্রদীপের ৫ টাকাও তিনি আত্মসাৎ করেননি। তার দাবি স্থানীয়রা না বিস্তারিত না জেনে তাকে জড়িয়ে এসব কথা বলছে।
একইভাবে প্রদীপের টাকা পাচারের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মোঃ শরিফ মেম্বার।
এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক এর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, কয়েকদিন আগে টেকনাফের গরু ব্যবসায়ী আবু ছৈয়দ ও মোঃ শরিফের মাধ্যমে প্রদীপের টাকা পাচারের বিষয়টি তিনি শুনেছেন বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।ঘটনা সত্য হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান দুদকের এই কর্মকর্তা।
Discussion about this post