চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁওতে এক তরুণী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাঙ্গুনিয়া থেকে নগরীতে ফেরার পথে মৌলভী পুকুর পাড় এলাকায় অটোরিকশা থেকে নামিয়ে এ সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটায়। গভীর রাতে নির্জন সড়কে আড়াই ঘণ্টা সময়ের মধ্যে অন্তত ১০ জন ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানার মৌলভী পুকুর পাড় এলাকায় মধ্যরাতে একটি গলিতে ২২ বছর বয়সী এক গৃহবধুকে গণধর্ষণের ঘটনায় সুমন নামে পুলিশেরই এক সোর্স গ্রেফতার ৮ জনকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এমনকি ভিকটিম গ্রেফতারকৃত আসামিদের পূর্ব পরিচিত বলেও জানা গেছে। তবে পুলিশ হেফাজতে থাকা ৮ আসামির মুখে সুমনের নাম আসলেও মামলার এজাহারে ও গ্রেফতারের তালিকায় নেই সেই সুমনের নাম। সংবাদ সম্মেলনে আসলেও অনেক প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারেননি সিএমপির উপ কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক।
নগর পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক শুক্রবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে এসেimageজানিয়েছেন, নগরীর চান্দগাঁও থানার মৌলভী পুকুর পাড় এলাকায় মধ্যরাতে একটি গলিতে ২২ বছর বয়সী এক গৃহবধুকে গণধর্ষণের ঘটনায় এক নারীসহ ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনার পর শুক্রবার ভোর রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেফতার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (০৮ অক্টোবর) রাত দেড়টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ওই এলাকার জনৈক আনোয়ার সাহেবের চারতলা বাড়ির ডান পাশের গলিতে ওই নারী গণধর্ষণের শিকার হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে গ্রেফতার আটজনের বিরুদ্ধে পুলিশ ওই নারীকে গণধর্ষণের অভিযোগ আনলেও আসামিরা জানিয়েছেন, তারা এই ধরণের কোনও ঘটনা ঘটায়নি। সুমন নামে চান্দগাঁও থানা পুলিশের একজন সোর্স তাদেরকে ফাঁসিয়ে দিয়েছেন। সুমন নিজেই এই ঘটনার মূল হোতা। তাকে সাথে নিয়ে সবাইকে গ্রেফতার করা হলেও পুলিশ সুমনকে গ্রেফতার দেখায়নি।
গ্রেফতার ৮ জন হলেন- জাহাঙ্গীর আলম (৩৮), মো. ইউসুফ (৩২), মো. রিপন (২৭), মো. সুজন (২৪), দেবু বড়ুয়া প্রকাশ জোবায়ের (৩১), মো. শাহেদ (২৪), রিন্টু দত্ত প্রকাশ বিপ্লব (৩০) ও মনোয়ারা বেগম প্রকাশ লেবুর মা (৫৫)। গ্রেফতার ৮ জনের মধ্যে জাহাঙ্গীর, ইউসুফ, বিপ্লব ও দেবু পেশায় সিএনজি চালক বলে জানিয়েছে পুলিশ। অন্যরা এলাকায় ঘোরাফেরা করেন। মনোয়ারা বেগমকে স্থানীয়রা পতিতা ব্যবসায়ী হিসেবেই চিনেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ডিসি বিজয় বসাক বলেন, ‘ভিকটিম বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার গ্রামের বাড়ি থেকে শহরে নিজ বাসার উদ্দেশ্যে সিএনজি অটোরিকশা যোগে রওনা হন। রাত ১১টার দিকে চান্দগাঁও থানার কাপ্তাই রাস্তার মাথায় সিএনজি থেকে নেমে বাসার উদ্দেশ্যে রিকশায় উঠেন। কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকেই আসামিরা ভিকটিমকে অনুসরণ করতে থাকে। পরে চান্দগাঁও থানাধীন মৌলভী পুকুর এলাকায় আসলে আসামিরা ভিকটিমকে রিকশা থেকে নামিয়ে টেনে হেঁচড়ে আরকান সড়কের মৌলভী পুকুর পাড়ের জনৈক আনোয়ার সাহেরেব চার তলা ভবনের ডান পাশের গলিতে নিয়ে যায়। সেখানে একটি ডাস্টবিনের পাশে রাত দেড়টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ভিকটিমকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে ভিকটিমকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালের ওসিসি তে ভর্তি করা হলে সেখান থেকে চান্দগাঁও থানা পুলিশকে ঘটনাটি অবহিত করা হয়। এরপর পুলিশ দ্রুত অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেফতার করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার পর আমি নিজে ওই ভিকটিমের সঙ্গে গিয়ে কথা বলেছি। ওই নারী আমাদের জানিয়েছেন ৮ থেকে ১০জন তাকে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণ কাজে বাধা দেওয়ায় তাকে বেদড়ক পেটানো হয়। অপর আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। এই ঘটনায় ভিকটিম বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। ওই আসামিদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।’
তবে পুলিশের এই তথ্য অস্বীকার করেছেন গ্রেফতার আসামিরা। নগর পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) কার্যালয়ে গ্রেফতার একাধিক আসামির সঙ্গে কথা বললে তারা উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা কেউ ওই নারীকে ধর্ষণ করিনি। আপনারা প্রয়োজনে আমাদের ডিএনএ টেষ্ট করে দেখতে পারেন। চান্দগাঁও থানা পুলিশের সোর্স এ ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। অথচ পুলিশ তাকেই গ্রেফতার করেনি।’
গ্রেফতার দেবু বড়ুয়া বলেন, ‘পুলিশের সোর্স সুমনসহ আমরা একই স্ট্যান্ডে সিএনজি চালায়। ভিকটিম নারী পতিতাবৃত্তি করে। করোনার সময় গত দুই মাস আগে ওই নারী আমাদের এক বন্ধুর কাছ থেকে ২ হাজার টাকা নিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার রাতে কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় ওই নারীকে দেখে সুমন আমাদের ডাক দেয়। পরে আমরা তার সাথে আসি। মৌলভী পুকুর পাড় এলাকায় এসে আমরা ওই নারীকে আটক করে। তার কাছ থেকে টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করি। এসময় তার ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে আমরা অনেকগুলো কনডম পাই। এসময় ওই নারীর সঙ্গে একটি ছেলে ছিল। টাকার জন্য আমরা তাদেরকে মারধর করি। ছেলেটিই বেশি মারধর করা হয়। এরপর আমরা বাসায় চলে যায়। পরে সকালে সুমন এসে আমার বাসার দরজায় নক করে। কাল রাতের বিষয়ে কথা বলবে বলে সে বাসায় পুলিশ নিয়ে আসে। এরপর পুলিশ এসে আমাকে ধরে থানায় নিয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘সুমনসহ আমরা ৪/৫জন একই স্ট্যান্ডে সিএনজি অটোরিকশা চালায়। অন্যরাও আমাদের পরিচিত, একসাথে চলাফেরা করি।’ একই কথা জানিয়েছেন গ্রেফতার আরেক আসামি মো. সুজন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বাস করেন এই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমাকে পুলিশ কোনও কারণ ছাড়ায় ধরে নিয়ে এসেছে।’
আসামিদের এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিজয় বসাক বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত হয়েই তাদেরকে গ্রেফতার করেছি। নিরাপরাধ কাউকে আমরা গ্রেফতার করিনি। ভিকটিম মহিলাকে আমরা ছবিগুলো দেখিয়েছি।
সড়কে প্রায় আড়াই ঘন্টা ধরে এক নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে ওই রাস্তা দিয়ে কি কেউ যায়নি? তাকে মারধর করা হয়েছে বলেছেন এর সঙ্গে পূর্ব কোনও শত্রুতার জের নেই তো? এমন প্রশ্নের উত্তরে বিজয় বসাক বলেন, ‘স্পর্শকাতর ঘটনা হওয়ায় আমরা দ্রুত অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেফতার করেছি। গ্রেফতারের পর আসামিদের ওইভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদ করলে আমরা বিষয়টি জানতে পারবো।’
সুমন পুলিশের সোর্স তার সঙ্গে ভিকটিমের পরিচয় ছিল এটি গ্রেফতার আসামি মনোয়ারা বেগমও স্বীকার করেছেন? এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে আমরা আপনাদের অনেক তথ্য জানাতে পারছি না। তদন্ত করার পর আমরা সব বিষয় আপনাদের জানাতো পারবো।’
ওই নারীর সঙ্গে ঘটনার সময় এক যুবক ছিল ওই বিষয়ে জানতে চাইলে বিজয় বসাক বলেন, ‘তার সঙ্গে একজন ছিলেন শুনেছি। এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনও তথ্য আমরা এখনও পায়নি।’
কুষ্টিয়ার এসপির দুর্ব্যবহারের অভিযোগ, বিচার চাইলেন ম্যাজিস্ট্রেট
ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালে কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন হাসানের সঙ্গে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম...
Discussion about this post