জসিম উদ্দীন ::
২০১০ সালে বালি উত্তোলন নীতিমালা অনুযায়ী যন্ত্রচালিত মেশিন দ্বারা ড্রেজিং পদ্ধতিতে নদীর তলদেশ থেকে বালি উত্তোলন নিষিদ্ধ। এছাড়া সেতু, কালভার্ট, রেললাইনসহ মূল্যবান স্থাপনার এক কিলোমিটারের মধ্যে বালি উত্তোলন করা বেআইনি।
এসব নিয়মনীতির কোন কিছুই তোয়াক্কা না করে কক্সবাজারের চকরিয়া-বদরখালী সেতুর একেবারে তলদেশ থেকে স্কেভেটর বসিয়ে গত এক বছর ধরে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি সেতু ঘেসে অবৈধভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক একটি জেটি। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে প্রায় ৭ লাখ মানুষের যাতায়াতের মহেশখালী- বদরখালী- রোডের দীর্ঘ সেতুটি।
স্থানীয়দের দাবি, সেতুর পিলারের নিচ থেকে বালি সরানোর কারনে যে কোনসময় সেতুটি ধ্বসে পড়ে বন্ধ হয়ে যেতে পারে মহেশখালী- বদরখালীর যোগাযোগ ব্যবস্থা।
এ ঘটনায় প্রতিদিন সেতুটি ব্যবহারকারী লাখো সাধারণ মানুষ ছাড়াও যানবাহন মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।তবে এ কর্মকাণ্ড জড়িত সিন্ডিকের প্রভাবশালী হওয়ায় মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না কেউ।
অভিযোগ উঠেছে, মহেশখালী কালামারছড়ার ইউনিয়ননের যুবলীগের সভাপতি আরিফ ও বদরখালী ইউনিয়নের আওয়ামীগের সাধারণ সম্পাদক ভুট্রো সিকদারের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট বালি উত্তোলন ও জেটি নির্মাণ কাণ্ডে জড়িত।
স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে,দীর্ঘ এক বছর ধরে সেতুর নিচ থেকে সেলো মেশিন বসিয়ে বালি উত্তোলন করে মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন প্রকল্পে বালি বিক্রি করে আসছে আরিফ- ভুট্রো সেন্ডিকেট। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নজরে দেয়ার পরও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ এর নির্মাণ সমাগ্রী লোড -আনলোডের ব্যবহার করার পরিকল্পনা নিয়ে ব্যক্তিগত বাণিজ্যিক জেটি টা নির্মাণ করছে ওই দুই নেতা।এতে করে সেতুটি হুমকির মুখে পড়লেও রহস্যনজক কারনে বরাবরই নীরব সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতুর পিলারের ঘেসে এস্কেভেটর দিয়ে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। বালি উত্তোলনের ফলে সেতুর নিচে এক ধরনের বিপদজনক বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে।
পাশাপাশি এসব বালি দিয়ে সেতু ঘেসে নদী ভরাট করে নির্মাণ করা হচ্ছে একটা বিশাল জেটি। এরইমধ্যে সেতুর পাশ্বর্বতী নদীর একটি অংশের বিশাল জায়গা ভরাট করে ফেলেছে চক্রটি।
সেতুর নীচ থেকে বালি উত্তোলন ও জেটি নির্মাণের বিষয়টি স্বীকার করেছেন, বদরখালী ইউনিয়ন আওয়ামীগের সাধারণ সম্পাদক ভুট্রো সিকদার।তিনি বলেন,আমি যুবলীগ নেতা আরিফের পার্টনার বালির ব্যবসা করেছি তবে আমি সেতু থেকে বালি উত্তোলন করে জেটি নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত নাই।
তিনি বলেন,আরিফ ও ইজারাদাররন আমাকে ফোন করে বিষয়টি জানালে আমি তাকে বারণ করি। কারন সেতুটি প্রায় সাড়ে ৭কোটি টাকায় ইজারা নিয়েছি সেখানে আমিও অংশীদার।
ভুট্রো সিকদার বলেন, আরিফ মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণ সামগ্রী লোড-আনলোডের ব্যবস্থা করতে জেটি টা নির্মাণ করতে চাইছেন। কিন্তু একটি সেতুর পাশে ব্যক্তিগত জেটি নির্মাণ অবৈধ। আর নিয়ম অনুযায়ী সেতুর এক কিলোমিটার মধ্যে বালি উত্তোলন বেআইনি। তাই আমি তার বেআইনি প্রস্তাবে সায় দেয়নি।
এ বিষয়ে কালামারছড়ার ইউনিয়নের যুবলীগের সভাপতি আরিফ বলেন,বদরখালী সেতুটা আমার জায়গার উপরে নির্মাণ করা হয়েছে।সরকারের কাজ থেকে পয়সা নেয়নি। আমি আমার জায়গার উপরে বাঁধ দিচ্ছি। এ কারনে সেতুর ক্ষতি হবে না বরং সেতু আরও শক্ত হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে,এবছর সড়ক বিভাগ থেকে বদরখালী সেতুটি ৭ কোটি ৩৯ লাখ ৮০ হাজার টাকায় ইজারা নিয়েছেন,মের্সাস প্রমিনেন্ট ইঞ্জিনির্য়াস।একইভাবে বদরখালীতে বিদ্যমান জেলা প্রশাসনের জেটি ঘাটও চলতিবছর ইজারা দেওয়া হয়েছে ১০ লাখ ১৮ হাজার টাকায়। সেইক্ষেত্রে অবৈধ জেটি নির্মাণ করা হলে সরকারি জেটি ঘাট থেকে সরকার বিপুল টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে। পাশপাশি অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে।
সেতুর টোল আদায়ের নিয়োজিত ইজারাদার মের্সাস প্রমিনেন্ট ইঞ্জিনির্য়াস এর এক কর্মকর্তা জানান,তারা সেতু থেকে বালি উত্তোলন বন্ধ বিকল্প জেটি নির্মাণের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে একাধিকবার জানিয়েছেন, কিন্তুু রহস্যজনক কারনে প্রশাসন বরাবরই নীরব।
জানতে চাইলে, মহেশখালী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ইউএনও মাজফুজুর রহমান বলেন,বিষযটি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর, কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সংযুক্তা দাশ গুপ্তা বলেন, বিষয়টি আমার নলেজে নাই। তবে ঘটনা সত্য হলে অভিযুক্ত যেই হোক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেনের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার রিং দেয়ার পরও সাড়া না পাওয়ায় তার প্রতিক্রিয়া জানা সম্ভব হয়নি।
Discussion about this post