জসিম উদ্দীন ॥
মেজর( অব:) সিনহা মোঃ রাদেশ খান হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে এক যোগে কক্সবাজার জেলার সব পুলিশের বদলীর পর জেলার সব থানার চিহ্নিত দালালরাও আত্মগোপনে চলে যায়। তবে আবারও সুযোগ বুঝে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দালালরা।
শুধু তাই নয়,এবার কক্সবাজারে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান র্যাবের নাম নাম ভাঙিয়ে একটি বাস কাউন্টারে ইয়াবা উদ্ধারের অভিযান পরিচালানা করে লক্ষাধিক ইয়াবা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে থানার চিহৃত দালাল নুরুল ইসলাম প্রকাশ থানার দালাল নুরুর বিরুদ্ধে।
গত শনিবার (২১নভেম্বর) রাতে কক্সবাজারের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের ইউনিক বাস কাউন্টার এই ঘটনা ঘটলেও রহস্যজনক কারনে ইউনিক পরিবহনের সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি চেপে রাখার চেষ্টা করেন।
পরে এ বিষয়ে প্রতিবেদক অনুসন্ধানে নামলে ঘটনায় জড়িতরা রবিবার গভীর রাতে কক্সবাজার সদর থানায় হাজির হয়ে নাম মাত্র এক হাজার ৭৯০ পিস ইয়াবা জমা দিয়ে বাকি সব ইয়াবা আত্মসাত করে চক্রটি। বিষয়টি স্বীকার করেছে কক্সবাজার সদর থানা পুলিশ।
অভিযুক্ত নুরুল ইসলাম প্রকাশ থানার দালাল কক্সবাজার পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত ভেইটখাইয়া (প্রকাশ) বারমাইয়া ভেইটখায়ার ছেলে। নুরু একজন চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী ও ছিনতাইকারীরদের গডফাদার বলে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে জানাগেছে,গত শনিবার (২১নভেম্বর) কক্সবাজার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের ইউনিক কাউন্টার থেকে রাত সাড়ে ১১টার ঢাকাগামী শেষ বাসটির টিকেট কাটে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের একটি চক্র। পরে ইয়াবা পাচারকারী চক্রের একজন ইয়াবা ভর্তি কাটুন নিয়ে বাস উঠার জন্য কাউন্টারে অপেক্ষা করছিলেন।
ওই সময় অপর আরেকটি স্থানীয় ইয়াবা সিন্ডিকেটের কয়েকজন ইয়াবার কার্টুনটি ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে কাউন্টারে হানা দেয়। বিষয়টি বুঝতে পেরে ইউনিক কাউন্টারে ম্যানেজারের কাছে ইয়াবা ভর্তি কার্টুনটি জমা রেখে সেখান থেকে সটকে পড়েন ইয়াবা বহনকারীরা।
বিষয়টি আঁচ করতে পেরে কাউন্টারে ম্যানেজার রাকিব বিষয়টি কক্সবাজার ইউনিক পরিবহণের জিএম রহিমকে অবগত করেন। পরে রহিম থানার দালাল নুরুকে নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।
জানা গেছে,থানার দালাল নুরুকে দেখে সাদা পোশাকে আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিত থাকতে পারে ভেবে সেখান থেকে পালিয়ে যায় ইয়াবা পাচারকারী ও ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে হানা দেয়া চক্রের সদস্যরা।
ঘটনা প্রত্যক্ষদর্শীদের দেয়া তথ্যমতে,নুরু সেখানে উপস্থিত হয়ে প্রথমে ইয়াবার কার্টুনটি নিজের আয়ত্ত্বে নেন। এরপর মোবাইল কানে দিয়ে র্যাবের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে স্যার সম্বোধন করে উচূ গলায় কথা বলার অভিনয় করেন। তাৎক্ষণিক ইয়াবা ভর্তি কার্টুনটি কক্সবাজার র্যাব ১৫ এর কার্যালয়ে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে ওইদিন রাত সাড়ে ১২ টার দিকে ঘটনা স্থল ত্যাগ করেন নুরু ও আবদু রহিম।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে কার্টুনটিতে কমপক্ষে ১০ কার্ড অর্থাৎ এক লাখ পিস বা তার বেশি ইয়াবা ছিল।
ঘটনার সত্যতটা স্বীকার করে নিয়েছেন জিএম আবদু রহিম।তিনি বলেন, বাস টার্মিনালের কাউন্টারের ম্যানেজার রাকিব ইয়াবা ভর্তি কার্টুনটির বিষয়টি আমাকে অবগত করলে আমি পুলিশের কারো সাথে পরিচয় না থাকায় তাৎক্ষণিক ফোনে যোগাযোগ করে পুলিশের সোর্স নুরুল ইসলামকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই।
পরে ইয়াবা ভর্তি কার্টুনটি উদ্ধারের পর র্যাবকে দেয়ার কথা বলে নুরু তার হেফাজতে নেয়। ওইদিন রাত দেড়টার দিকে ইয়াবা র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে জানিয়ে- র্যাব পরিচয় দানকারী এক ব্যক্তির সাথে ফোনে কথা বলিয়ে দেন।
কিন্তুু পরেরদিন রাতে অর্থাৎ রবিবার (২২নভেম্বর) গভীর রাতে নুরু আমাকে ফোনে বলেন, ইয়াবা অল্প হওযায় র্যাব তা গ্রহণ না করে পুলিশকে দিতে বলেছে। পরে আমিসহ কক্সবাজার থানায় উপস্থিত হয়ে আনুমানিক চার হাজার পিস ইয়াবা হস্তান্তর করি।
সরাসরি পুলিশকে ফোন না করায় ভুল হয়েছে জানিয়ে-ইয়াবা লুট করার প্রশ্নও আসে না বলে দাবি করেন আবদু রহিম।
র্যাবের নাম ব্যবহার করে ইয়াবা উদ্ধারের কথা স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত নুরুল ইসলাম।তিনি বলেন,ইয়াবা উদ্ধার করতে গিয়ে আমি ভয়ে র্যাবের নাম ব্যবহার করেছি। কারণ সবাই আমাকে ইয়াবার ভাগ দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছিল।
নুরু দাবি করেন,সেখানে ১লাখ ইয়াবা ছিলনা। কার্টুনের ভিতরে দুটি ইট,কিছু কাগজ ও একটি লুঙ্গি ছিল। তাই ইয়াবা বেশি মনে হয়েছে।
ওইদিন সাথে সাথে পুলিশকে কেন খবর দেয়া হয়নি এবং একদিন পর কেন ইয়াবা গুলো থানায় জমা করা হয়েছে এমন প্রশ্নে জবাবে নুরু বলেন,ইয়াবার মালিককে খোঁজার জন্য তা জমা করিনি। পরে জমা করে দিয়েছি।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি তদন্ত গোবিন্দ্র চন্দ্র দে বলেন,রবিবার রাতে সদর থানার ওসি স্যারের উপস্থিতিতে নুরু ও আবদু রহিম একটি কার্টুন নিয়ে থানায় হাজির হয়। সেখানে গণনা করে এক হাজার ৭৯০পিস ইয়াবা পাওয়া যায়।
তিনি বলেন,র্যাবের নাম ব্যবহার,ইয়াবা আত্মসাত ও একদিন পরে ইয়াবা জমা দেয়ার বিষয়টি পুলিশের জানা ছিলনা।
আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে না নিয়ে পুলিশের সোর্স ইয়াবা উদ্ধার করে থানায় জমা করতে পারে কিনা জানতে চাইলে, তিনি দাবি করে বলেন, নুরু থানার দালাল কিনা তা আমার জানা নাই। পরিত্যক্ত অবস্থায় ইয়াবা পেয়ে তা স্বপ্রণোদিতভাবে থানা জমা দেয়া হয়েছে ভেবে তা গ্রহণ করা হয়েছে। এখন বিস্তারিত ঘটনা আপনার কাছে শুনেছি।বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো।
তিনি বিষয়টি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবগত করার অনুরোধ জানান।তবে মুঠোফোনে একাধিকবার রিং দেয়ার পরও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে অবগত করে জানতে চাইলে কক্সবাজার অতিরিক্ত রফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশের এভাবে ইয়াবা জমা নেয়ার কোন সুযোগ নাই। তবে বিষয়টি কতটুকু সত্যি আমার জানা নাই।তিনি বলেন,আমি আপনার কাছে প্রথম শুনলাম। বিষয়টি বিস্তারিত জেনে আইনানুগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসময় তিনি প্রতিবেদককে বিস্তারিত তথ্য গুলো দেয়ার অনুরোধ জানান।
বিষয়টি কক্সবাজার র্যাব ১৫ এর উইং কমান্ডার আজিম আহমেদ এর নজরে আনা হলে, তিনি ঘটনার বিস্তারিত দিয়ে র্যাব সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ জানান।
এদিকে নুরুর বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কক্সবাজার পৌসরসভার ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাহাব উদ্দীন বলেন,নুরু থানার চিহ্নিত দালাল। সে এলাকার ইয়াবা ব্যবসায়ী ও অপহরণ, ছিনতাইকারী চক্রের গডফাদার। পৌরসভার ৫টি পয়েন্টে নুরুর ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা সক্রিয়।
তিনি আরও বলেন,নুরু কিছুদিন আগেও একজনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করেছিল।পরে আমি গিয়ে তাকে উদ্ধার করি।
নুরু একজন পুরাতন রোহিঙ্গা এবং থানা পুলিশের সোর্স পরিচয় দিয়ে এসব অপকর্ম করে বলে জানান তিনি।তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও আছে বলে জানান তিনি।
প্রাথমিকে উপবৃত্তি পেতে জন্ম নিবন্ধন আবশ্যক: কক্সবাজারে টাস্কফোর্সের সঙ্গে যোগাযোগ করে জন্ম নিবন্ধন সংগ্রহ করা যাবে
প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রদান প্রকল্প (তৃতীয় পর্যায়) এর আওতায় শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি পেতে হলে নিবন্ধন লাগবে। উপবৃত্তির জন্য তথ্য...
Discussion about this post