অমিত জৈন ॥
ভারতের জন্য চলতি বছরটি অস্বস্তিকর।
কেবল কোভিড-১৯-এর বিস্তারের কারণেই নয়, অর্থনীতি নিয়েও মারাত্মক সমস্যায় আছে। মনে হচ্ছে, পালে আর হাওয়া লাগছে না। বেকারত্ব বাড়ছে। গ্রাজুয়েটরা যে চাকরির জন্য প্রস্তুত হয়েছি, তা আর খুঁজে পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের মতে, অর্থনীতি ১০.৩ ভাগ সঙ্কুচিত হওয়ায় ভারতে ৪০ মিলিয়নের বেশি লোক চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাবে। এখানেই শেষ নয়। চীনা সৈন্যদের সাথে হাতাহাতি লড়াইয়ে ভারত তার ২০ সৈন্যকে হারিয়েছে। ভারতের গর্ব আরো খর্ব করে দেশটির মাথাপিছু জিডিপি বাংলাদেশেরও নিচে চলে যাচ্ছে। আর তা মেনে নেয়া খুবই কঠিন।
আমার প্রজন্মের লোকজন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছে। তারা দেখেছে, তাদের দেশ আর্থিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল গরিব দেশ। কিন্তু ওই অবস্থা ধীরে ধীরে অবসান হয়েছে। ৩০ বছরের কম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের গড় আয়ু ১৪.১ বছর বেড়েছে, চরম দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে অর্ধেকেরও বেশি, মাথাপিছু আয় বেড়েছে তিন গুণ।
১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরের সময় ক্ষুদ্র ঋণের সহায়তায় দারিদ্র থেকে মুক্তির প্রথম সফলতা পেতে শুরু করেছে। টেলিকম খাত বিকশিত হচ্ছিল, রাস্তার মান ভালো হচ্ছিল। রাজনীতি তখনো তালগোল পাকানো হলেও বাংলাদেশ ভালো কিছু পাচ্ছিল।
প্রথমত, রাষ্ট্র যেখানে ব্যর্থ হচ্ছিল, সেখানে নাগরিক সমাজকে সুযোগ দিচ্ছিল। দ্বিতীয়ত, নারীদের জন্য কর্মস্থলকে নিরাপদ করছিল। তৃতীয়ত ও সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো, সন্ত্রাসবাদকে কুঁড়িতেই দমন করতে সক্ষম হয়েছে। এসবের মধ্যেই বাংলাদেশের নির্মাণখাত বিকশিত হতে শুরু করে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের পোশাক ও পাদুকার ৭ ভাগ রফতানি করে।
গার্মেন্ট কারখানাগুলোতে এখন ৩.৬ মিলিয়নের বেশি কর্মী কাজ করে। তাদের অর্ধেকই নারী। বেতন কম হলেও চাকরি থাকায় তারা আয় পাচ্ছে, নিরাপত্তা পাচ্ছে, যা অনানুষ্ঠানিক কাজে নেই। এই বিষয়টি প্রবলভাবে গত মার্চে দেখা গেছে। ওই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি করোনাভাইরাস ঠেকাতে দেশব্যাপী লকডাউন আরোপ করেন। আর এতে করে নগরকেন্দ্রগুলোতে দিনমজুর হিসেবে কর্মরতদের কঠিন অবস্থায় ফেলে দেয়। তারা দলে দলে চলে যাওয়ার উদ্যোগ নেয়।
কিন্তু পরিবহন বন্ধ থাকায় হাজার হাজার লোক পাঁয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতে থাকে বেপরোয়া হয়ে। তাদের দুর্দশা নির্মাণ খাতের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। কিন্তু তা খালি কথায় কাজ হওয়ার নয়। ভারতের দরকার স্বল্পতম সময়ে আনুষ্ঠানিক চাকরির ব্যবস্থা করা।
কিন্তু ভারত কি বাংলাদেশকে অনুকরণ করে চাকরি সৃষ্টি করতে পারবে? পূর্ব ভারতের উদারহণ বিবেচনা করা যেতে পারে। এখান থেকেই দিনমুজুরদের মূল বাহিনী এসে থাকে।
বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম সবচেয়ে গরিব অবস্থায় আছে। এসব এলাকা সবচেয়ে কম শিল্পায়িত, সবচেয়ে ঘন বসতিপূর্ণ। এসব রাজ্যকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিনে পরিণত করতে পারলে ভারত নতুন করে কর্মশক্তি লাভ করতে পারবে।
আজ যে অঞ্চলে ঢাকা অবস্থিত, সেখানে প্রাচীন বিশ্বের সবচেয়ে সূক্ষ্ম বস্ত্র মসলিন কাপড় উৎপাদন হতো। এটা ছিল রুচি আর বিলাসের প্রতীক। বাংলাদেশ সেলাইয়ে প্রাচীন শিল্পকেই আধুনিক জীবনে নিয়ে এসেছে। এখান থেকে সম্ভবত কিছু শেখার আছে।
ঢাকা তার ক্রেতাদের কাছ থেকে প্রিফেনশিয়াল টেরিফ ট্রিটমেন্ট পেয়ে থাকে। আবার ভারতের তুলনায় তার মুজুরিও কম। তবে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হলে এই সুবিধাটি হারিয়ে ফেলবে। এই পর্যায়ে গার্মেন্ট শিল্পগুলো ভারতে সরিয়ে নেয়া হয়তো সুবিধাজনক হবে। বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্য সহজ করলে এই প্রক্রিয়াটি সহজতর হবে।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে মোদির অধীনে ভারতের মধ্যে ওই ক্ষিদেটি দেখা যাচ্ছে না। দেশটি বরং আমদানি কর বাড়িয়ে দিয়েছে। দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য মাত্র ১০ বিলিয়ন ডলার। ব্যবসায়ীরা বিলম্বের জন্য হিমশিম খেতে থাকে। মালামাল সীমান্ত চেকপয়েন্টগুলোতে নামিয়ে আবার ওঠাতে হয়। ভারত সম্প্রতি জাপানের উদ্যোগে গড়া একটি বাণিজ্য ব্লক থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে। অথচ জাপানের সাথে কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়াতে মোদি আগ্রহী। খুবই পরিতাপের বিষয়। অথচ বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগের সুফল ধীরে ধীরে পূর্ব ভারতে ছড়িয়ে পড়তে পারত।
টোকিও ইতোমধ্যেই ৩৯০ মিলিয়ন ডলারের ঝুঁকি গ্রহণ করেছে। ঢাকার কাছে চার কিলোমিটার এলাকায় বিশেষ অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা সহায়তা করছে জাপান। এটা সফল হলে দক্ষিণ এশিয়ায় জাপানি কোম্পানিগুলোর নতুন ম্যানুফেকচারিং হাব হওয়ার ভারতের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে। ভারতের গরিব পূর্ব এলাকার অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে ভারতকে চাকরি সৃষ্টিকারী ভেল্যু চেইনে থাকতে হবে এবং বাংলাদেশের সাথে আরো ঘনিষ্ঠভাবে অর্থনৈতিক একীভূত করতে হবে।
লেখক: সিঙ্গাপুরভিত্তিক কনসালট্যান্ট।
দেশের ৬৫১ তম থানা কক্সবাজারের ‘ঈদগাঁও’
সমুদ্রকন্ঠ রিপোর্ট ॥ কক্সবাজার সদর উপজেলার পাহাড় ও উপকূল বেষ্টিত বৃহত্তর ঈদগাঁওকে আলাদা থানা ঘোষণা করা হয়েছে। ঈদগাঁওর পাঁচ ইউনিয়নের...
Discussion about this post