প্রায় ১৮ মাস পালিয়ে থাকার পর মিয়ানমারে ‘বৌদ্ধ বিন লাদেন’ নামে পরিচিত এক কট্টরপন্থী বৌদ্ধভিক্ষু সোমবার পুলিশের কাছে আত্মসমর্পন করেছেন। সাধারণ নির্বাচনের মাত্র এক সপ্তাহ আগে পুলিশের হাতে তার ধরা দেয়াকে অনেকেই ভোট গ্রহণকে প্রভাবিত করার চক্রান্ত বলে মনে করছেন।
বৌদ্ধ প্রধান দেশটিতে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর কারণে আশিন বিরাথু নামে এই বৌদ্ধভিক্ষুকে টাইম ম্যাগাজিন ‘বৌদ্ধ বিন লাদেন’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলো।
৫২ বছর বয়সী এই ভিক্ষু বিশেষ করে জাতিগত রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়িয়ে এবং ইসলাম-বিরোধী বক্তব্যের জন্য কুখ্যাতি কুড়ান।
গত বছর তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর থেকে তিনি পালিয়ে ছিলেন।
কে এই ‘বৌদ্ধ বিন লাদেন’?
মসজিদকে তিনি বর্ণনা করেন “শত্রুর ঘাঁটি” হিসেবে, তার কাছে মুসলিমরা হচ্ছে “পাগলা কুকুর”, মুসলিমদের বিরুদ্ধে তার অভিযোগ “তারা চুরি করে ও বর্মী মহিলাদের ধর্ষণ করে” এবং “গণহারে জন্ম দিয়ে তারা খুব দ্রুত নিজেদের বিস্তার ঘটাচ্ছে।”
বিবিসি জানায়, আশিন বিরাথু প্রথম আলোচনায় আসেন ২০০১ সালে যখন তিনি মুসলিমদের মালিকানাধীন ব্যবসা ও দোকানপাট বয়কট করার জন্যে প্রচারণা শুরু করেন।
এরকম একটি প্রচারণা শুরু করার পর ২০০৩ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বিচারে তার ২৫ বছরের সাজা হয়েছিল। কিন্তু তাকে পুরো সাজা খাটতে হয়নি। সাত বছর পর সরকারের ঘোষিত সাধারণ ক্ষমায় তিনি ২০১০ সালে কারাগার থেকে বের হয়ে আসেন।
কিন্তু বিরাথুর জেল-জীবন তার মধ্যে কোন পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি, বরং মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে তিনি তার বিদ্বেষমূলক বক্তব্য অব্যাহত রাখেন।
আশিন বিরাথু তার বক্তব্য বিবৃতিতে বৌদ্ধদের শৌর্য বীর্যের কাহিনী তুলে ধরেন, তার সাথে মিশিয়ে দেন জাতীয়তাবাদের নেশাও।
সাংবাদিকদের সাথে যখন বিরাথু কথা বলেন তখন তিনি খুব শান্তভাবে তাদের প্রশ্নের জবাব দেন ঠিকই, কিন্তু তিনি যখন সভা সমাবেশে বা জনসভায় বক্তব্য রাখেন তখন তিনি অত্যন্ত আবেগপূর্ণ হয়ে উঠেন।
তার কথার প্রতিটি বাক্যে ছড়িয়ে থাকে মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা। মিয়ানমারের বিদ্যমান মুসলিম-বিদ্বেষে তার এসব বক্তব্য আরো উস্কানি জোগাতে সাহায্য করে।
মুসলিম পুরুষরা যাতে বৌদ্ধ নারীদের বিয়ে করতে না পারে সেজন্যে একটি আইন তৈরিতেও অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন বিরাথু। ওই আইনে মুসলিম পুরুষের সাথে বৌদ্ধ নারীর বিয়ে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
মিয়ানমারে কর্তৃপক্ষ বছরের পর বছর ধরে তাকে রক্ষা করার পাশাপাশি তাকে সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছে। আর একারণেই তিনি মুসলিমদের বিষয়ে দিনের পর দিন এরকম বিদ্রূপাত্মক ও নিন্দাজনক বক্তব্য দিতে সক্ষম হচ্ছেন।
কিন্তু তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার-জয়ী ও মিয়ানমারের ডিফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চিকে আক্রমণ করার পর দেশটির কর্তৃপক্ষ এই উপসংহারে পৌঁছেছে যে তিনি তার সীমা ছাড়িয়ে গেছেন এবং এখন তার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করা হয়।
মিয়ানমারে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো উইরাথুর সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ
মিয়ানমারে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো বিতর্কিত বৌদ্ধ ভিক্ষু আশ্বিন উইরাথুর সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানায়, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে...
Discussion about this post