সম্প্রতি কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান দৈনিক সমুদ্রকন্ঠের মুখোমুখি হয়েছিলেন।
তার সাথে কথা হয়, কক্সবাজারের পুলিশ প্রশাসন,আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি এবং তার করণীয় এবং পরিকল্পনা নিয়ে। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন দৈনিক সমুদ্রকন্ঠ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মঈনুল হাসান পলাশ।
*সমুদ্রকন্ঠ- কেমন আছেন আপনি?
*পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান- আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি,আপনারা কেমন আছেন?
*সমুদ্রকন্ঠ- জি, আমরা সবাই ভালো আছি। অতি সম্প্রতি আপনি কক্সবাজার জেলার পুলিশ প্রধানের দায়িত্ব নিয়ে এসেছেন। আপনাকে স্বাগতম। আপনাকে বিশেষ মূহুর্তে,বিশেষ প্রয়োজনে এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আপনি মনে করেন কি-না,বিশেষ কোনো কাজ করে আপনাকে দেখিয়ে দিতে হবে। যার মাধ্যমে আপনি বিশেষ পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরেছেন?
*পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান- ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর প্রশ্নের জন্য। আমরা যদি মানুষের জন্য পুলিশী সেবা নিশ্চিত করতে পারি,সেটাই হবে আমাদের বিশেষ কাজ।
*সমুদ্রকন্ঠ- আপনি যদি সুনির্দিষ্টভাবে বলতেন,ঠিক এই মুহুর্তে আপনি কোন কাজকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন?
*পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান- আমি এই জেলাতে যোগদান পর থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে, যেমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম,সাংবাদিক ভাইদের কাছ থেকে,বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের কাছ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছি। এবং তাদের প্রথম প্রত্যাশা হলো কক্সবাজার শহরকে যানজটমুক্ত করতে হবে। এটা কিন্তু আমার কাছে প্রায়োরিটি। যেহেতু পাবলিকের ডিমান্ড এটি। আমরা দেখলাম,যেখানে মানুষ বেশী চলাচল সেখানে ব্যাপক যানজট হচ্ছে। যেহেতু জনদূর্ভোগ এটি। রং পার্কিং,যত্রতত্র গাড়ি এলোমেলো করে রাখা। তারপরে হলো যে,অনুমোদনের তুলনায় কয়েকগুণ বেশী গাড়ি চলাচল করছে। সিএনজি-টমটম, এসব গাড়ির চালকদের অনেকের বয়স অনেক কম। আমরা কোনো লাইসেন্স দেখতে পাচ্ছি না। লাইসেন্স পেতে ১৮ বছর বয়স হতে হয়। এদের কোনো প্রশিক্ষণ নেই। এসব নিয়মের ব্যত্যয় ঘটছে এখানে। যার ফলে ছোটোখাটো দূর্ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। এবং ফুটপাতে যত্রতত্র দোকান দেখতে পাচ্ছি। এতে করে মানুষের সময় নষ্ট হচ্ছে।
এই বিষয় প্রত্যক্ষ করে আমরা অবৈধ যানবাহন,লাইসেন্স না থাকা, এই সমস্ত অনিয়মের বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশকে দিয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে। এর আগে আমরা চালক এবং মালিকদের নিয়ে পুলিশ লাইনে সচেতনতামূলক সভা করেছি। মাইকিংও করেছি। তারপরও যখন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না,তখন ট্রাফিকের নিয়মিত অভিযান চলছে।
ট্রাফিক পুলিশকে দিয়ে চালক ও যাত্রী সাধারণকে মাস্ক পড়ে চলাচল করতে উদ্বুদ্ধ করছি।
*সমুদ্রকন্ঠ- কক্সবাজারে থানা কেন্দ্রিক তদবির বাণিজ্য,থানার দালালী এবং বিশেষ পুলিশের কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ প্রায় সময় উঠেছে। আপনি,আপনার নতুন টিমকে নিয়ে এসব অভিযোগের প্রে্িক্ষতে পরিচ্ছন্নভাবে দায়িত্ব পালন করবেন? কোনো পরিকল্পনা আছে কি না?
*পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান- ধন্যবাদ আপনার প্রশ্নের জন্য। তবে একটি কথা আমি বলতে চাই। পুলিশের মাদক সংশ্লিষ্টতার কারণে বদলী করা হয়েছে-এই বিষয়টির সাথে আমি একমত নই।
সরকার যেটি ভালো মনে করেছেন,তাই করেছেন। এ ব্যাপারে আমার কোনো মন্তব্য নেই।
কোনো ট্উাট,বাটপার,মধ্যস্বত্বভোগী থানায় স্থান পাবে না। থানায় ঢুকতে পারবে না। আমরা কিন্তু সেটা নিশ্চিত করেছি। এই থানা হবে সাধারণ মানুষের থানা। সেবাপ্রার্থী,দশনার্থী,ভূক্তভোগীর জন্য থানার দরজা চব্বিশ ঘন্টা খোলা।
কিন্তু,টাউট-বাটপার কেউ থানায় এলে,সাথে সাথে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমাদের কোনো সদস্যও যদি টাউট-বাটপার শ্রেণীর লোকজনকে প্রশ্রয় দেয়,তাহলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবো। বিগত দুই মাসে আপনি কোনো উদাহরণ দেখাতে পারবেন না,যেখানে কোনো টাউট-বাটপার থানায় আশ্রয় পেয়েছে।
আর কোনো পুলিশ সদস্য যদি মাদকসেবী হয়,মাদকের কারবারে জড়ায়,তবে এটি তার ব্যক্তগত দায়।এব্যাপারে বিভাগীয় ব্যবস্থা যেমন রয়েছে,ফৌজদারী ব্যবস্থা কিন্তু নেয়া হচ্ছে।
আপনারা সম্প্রতি লক্ষ্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটনসহ দেশের কয়েকটি ইউনিটে পুলিশের মাদক সেবনের দায়ে তাদের চাকরীচ্যুত করা হয়েছে। বেশ কয়েকজনও কিন্তু জেলেও গেছে।
*সমুদ্রকন্ঠ- কক্সবাজারে কমিউনিটি পুলিশিং রয়েছে। এর পাশাপাশি আপনি বিট পুলিশিংয়ে গুরুত্ব
দিয়েছেন কেনো?
*পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান- সুন্দর প্রশ্ন আপনার। এই জিজ্ঞাসাটা স্বাভাবিক। কমিউনিটি পুলিশিং এবং বিট পুলিশিংয়ের কনসেপ্ট কিন্তু আলাদা। কমিউনিটি পুলিশিংটা হলো কোনো ভৌগলিক এলাকার মধ্যে পুলিশ এবং কমিউনিটির সদস্যদের নিয়ে অপরাধদমনমূলক একটি কনসেপ্ট। এবং সেখানে পুলিশ ও জনগণের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরী হয়। এটি কিন্তু বন্ধ হয় নি।
আর বিট পুলিশিংটা হলো,পুলিশী সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য এবং তাৎক্ষণিকভাবে ও স্থানীয়ভাবে অপরাধদমনমূলক কনসেপ্ট হলো বিট পুলিশিং। যেখানে কোনো এলাকাকে ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করে পুলিশিং কার্যক্রম চলে। আমি আরো সহজভাবে বলি। জেলা পর্যায়ে পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্রিক স্থানীয়ভাবে যে পুলিশিং চালু করেছি,সেটাই বিট পুলিশিং। পৌরসভায় বিভিন্ন ওয়ার্ড থাকে। এ রকম প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটি পুলিশ বিট স্থাপন করা হবে। প্রতিটি বিটে একজন এসআই,একজন এএসআই এবং দুই বা ততোধিক কনস্টেবল থাকে। আবার ইউনিয়ন পরিষদে প্রতিটি ইউনিয়নে হবে একটি বিট। ক্ষেত্রবিশেষে ফোর্স আরো বাড়ানো হতে পারে।
বিট পুলিশিংয়ের কনসেপ্টটা হলো,থানা আমাদের পুলিশী সেবার মূল কেন্দ্রবিন্দু আপনারা জানেন। থানার সেবাটিকেই আমরা স্থানীয়ভাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেয়ার প্রত্যয় নিয়ে বিট পুলিশিং চালু করেছি। যেখানে,বিট পুলিশের সদস্যরা দিনের বেশীরভাগ সময় বিটে অবস্থান করবে। সেখানে একটি অফিস থাকবে। অফিসে কিছু সময় বসবে,এলাকায় টহল করবে,পেট্রোল করবে। অপরাধীদের গতিবিধি নজরদারী করবে,মামলার তদন্ত করবে। ওয়ারেন্ট তামিল করবে। নিয়মিত মামলার আসামী গ্রেপ্তার করবে। এর পাশাপাশি অপরাধের সাথে লিপ্ত যারা,তাদের তালিকা করবে। এবং সেবাভিত্তিক যে কার্যক্রম আছে,যেমন-জেনারেল ডায়েরী করা,ক্লিয়ারেন্স অনুসন্ধান করা,ভেরিফিকেশন এই জাতীয় সেবা ভিত্তিক কার্যক্রম।
সবচেয়ে বড় কথা,মানুষ যখন বিপদে পড়ে,পুলিশ গিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ায়।
প্রয়োজন হলে পুলিশ বাড়ী বাড়ী যাবে। মানুষ কোনো অপরাধের শিকার হচ্ছে কি না? তাদেরকে আইনী সহযোগিতা করবে।
আরেকটি কথা। বিট পুলিশিং কিন্তু নতুন কোনো বিষয় না। এটি ১৯৪৩ সালে প্রণীত পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল এ বিট পুলিশিং ব্যবস্থার কথা বলা আছে। এাটর সুফল আপনারার শিগগিরই পাবেন। আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি।
*সমুদ্রকন্ঠ- সাম্প্রতিক সময়ে কমিউনিটি পুলিশের সদস্যদের বিরুদ্ধে ইয়াবা কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কেউ কেউ গ্রেপ্তারও হয়েছে। এছাড়া কমিউনিটি পুলিশের নেতৃত্বে কোনো পরিবর্তন আনবেন কিনা? যাতে কমিউনিটির সাথে যোগাযোগ আছে,কমিউনিটির নেতৃত্ব দেন, এই বিষয়টি মাথায় রেখে।
*পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান- কমিউনিটি পুলিশিং হলো জনগণ এবং পুলিশের পার্টনারশীপের পুলিশিং। এখানে কমিউনিটির মাঝে যারা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য,শ্রদ্ধেয় তাদেরকেই কমিউনিটি পুলিশের নেতৃত্বে নেয়ার বিধান। আমি এখানে আসার পরে শুনি নাই যে কমিউনিটি পুলিশের সদস্য মাদকসহ ধরা পড়েছে। আগে কি হয়েছে,সেটি আসলে আমার জানা নেই।
তবে কমিউনিটি পুলিশের বর্তমানে কি অবস্থা? নেতৃত্বে কারা আছেন? এটি আমরা অলরেডি যাচাই বাছাই শুরু করেছি। যদি কেউ বিতর্কিত থাকেন,এমন কারো নাম যদি কমিউনিটি পুলিশে অন্তর্ভূক্ত থাকে,আমরা তা রিভিউ করবো। এটি কোনো স্থায়ী বিষয় না। যে কাউকে আর বাদ দেয়া যাবে না। জেলা কমিউনিটি
পুলিশের সর্বময় ক্ষমতা কিন্তু আমার হাতে রয়েছে। আমার উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে পরামর্শ করেই,এটাকে যদি পরিবর্তন করা লাগে,অবশ্যই আমরা করবো। আমরা কোনোভাবেই কোনো বিতর্কিত ব্যক্তিকে কমিউনিটি পুলিশে রাখবো না। এটি কিন্তু আপনাকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি। আপনাদের জানামতে যদি এমন কোনো বিতর্কিত ব্যক্তি কমিউনিটি পুলিশে থাকার তথ্য দেন তাহলে উপকৃত হবো।
*সমুদ্রকন্ঠ- অবৈধ যানবাহন এবং যানজট সমস্যাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে বলে আগেই জানিয়েছেন। আপনি এটাও বলেছেন যে,কক্সবাজারে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অবৈধ যানবাহন চলাচল করে এবং প্রচুর অবৈধ মোটর সাইকেলও আছে। অবৈধ যানবাহন বলতে শুধু অবৈধ মোটর সাইকেলও না, অবৈধ সিএনজিও আছে, অবৈধ চাঁদের গাড়ীও আছে, অবৈধ মাইক্রোবাসও আছে। এবং অবৈধ ডাম্পার সবচেয়ে ভয়ানক। আপনি দেখেন কক্সবাজারে একটা বড় ইস্যু হয় পরিবেশ ধ্বংস এবং পাহাড়কাটা। এই পাহাড়কাটার সাথে ডাম্পার সবচেয়ে বেশী জড়িত। কারণ পাহাড়টি কাটার পরে সেই মাটি পরিবহনের জন্য নাম্বারবিহীন ডাম্পার ব্যবহার করা হয়। আমাদের কাছে যে তথ্য আছে,অন্তত পাঁচ হাজার অবৈধ ডাম্পার আছে। আপনি কিছু অবৈধ মোটর সাইকেল ধরেছেন,সাধুবাদ। কিন্তু বাকী অবৈধ যানবাহন,বিশেষ করে ডাম্পারের ব্যাপারে কি হবে?
*পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান- আসলে সড়ক পরিবহন আইনে কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণীর যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযানের কথা বলা নাই। যেহেতু আপনি বিষয়টি আমার নজরে নিয়ে এসেছেন, অবৈধ ডাম্পারের কথা বলছেন,আমরা ট্রাফিক বিভাগকে নির্দেশ দেবো রেজিষ্ট্রেশনবিহীন এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। পাহাড় কাটার সাথে এসব যানবাহন জড়িত,বিষয়টির সাথে অন্যান্য আরো সরকারী বিভাগ আছে। আমি আপনাকে অনুরোধ করবো যে,প্রত্যেকটা বিষয় সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ডিপার্টমেন্টের নজরে যদি নিয়ে আসেন, তাহলে এই কাজটি কিন্তু আরো সহজ হয়।
আমাদের দায়িত্বের মধ্যে যেটা পড়ে, সেই অংশটুকুই আমরা করবো। সড়ক পরিবহনের ব্যত্যয় ঘটালে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেবো।
*সমুদ্রকন্ঠ- এবারে সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয়টির ব্যাপারে বলবো। কক্সবাজার-টেকনাফে ইয়াবার পাচার ঠেকাতে বিশেষ কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন কি না? আপনার নিজস্ব উদ্যোগ।
*পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান- ইয়াবা কিন্তু আমাদের এখানকার প্রোডাক্ট না। এটা পাচার হয়ে এখানে আসে। আমাদেরকে সমস্যার মূলে আঘাত করতে হবে। আমি যদি শুধু ফেরী করে বিক্রেতা কিংবা যারা বাহক,শুধু তাদেরকে যদি গ্রেপ্তার করি,তাহলে কিন্তু সমস্যার সমাধান হবে না। মাদক দমন অথবা নির্মুল হবে না। অনেকে নির্মূলের কথা বলেন। নির্মুল শব্দটা অনেক ব্যাপক। এটা কিন্তু সহজসাধ্য না। তবে এই মাদক দমন সহজ। জানতে পারেন,এই মাদক দমনে আমরা কতোটুকু ভূমিকা রাখছি।
আমরা যেটা করছি,যে মামলাগুলো রুজু হচ্ছে,যারা বাহক হিসেবে ধরা পড়ছে,যারা মাদক বিক্রেতা হিসেবে ধরা পড়ছে, আমরা তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। এবং এই মাদকটা কিভাবে এবং কোন কোন মাধ্যম হয়ে তাদের কাছে আসছে,সেগুলো জানার চেষ্টা করছি। মাদক পাচারের সাথে বিভিন্ন পর্যায়ে যারা জড়িত,কেউ অর্থ বিনিয়োগ করছে,কেউ মাদক মজুদ করছে। কেউ এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে। এদের হাতবদল হয়ে মাদক পাচারকারীরা নিয়ে যাচ্ছে।তারপর খুচরা বিক্রেতার হাত ঘুরে মাদকসেবনকারীদের কাছে যাচ্ছে। তো আমরা অচিরেই মাদক ব্যবসার নেপথ্যের ব্যক্তিদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেবো।
*সমুদ্রকন্ঠ- মাদক ব্যবসায়ীদের বর্তমান তালিকার সাথে নতুন করে কোনো তালিকা করার চিন্তাভাবনা আছে কি না?
*পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান- মাদক ব্যবসায়ীদের বর্তমান তালিকা করা রুটিনমাফিক কাজ। যখনই কোনো নতুন ব্যক্তি মাদকসহ ধরা পড়ছে,মামলা হচ্ছে, সে-ই কিন্তু তালিকাভূক্ত হচ্ছে। আমরা যাচাই বাছাই করছি। যখনই কোনো মাদক কারবারী ধরা পড়ছে, আমরা আমাদের সার্ভারে তালিকাভূক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে নাম মিলিয়ে দেখছি।
এটা কোনো স্থায়ী বিষয় না। যে একবারই আমরা তালিকা তৈরী করলাম। এটা চলমান প্রক্রিয়া। নতুন এবং পুরাতনদের মাঝে কোনো যোগসাজশ আছে কি না? তাও খতিয়ে দেখছি।
আরেকটি বিষয় হলো,আমরা যখন কোনো মাদক ব্যবসায়ীকে সোপর্দ করি,তখন সাক্ষ্য প্রমাণসহই তাকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করি। যাতে তার সাজা নিশ্চিত হয়।
যখন কোনো মাদক ব্যবসায়ী ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হচ্ছে,তখন ঘটনাস্থলেই পাবলিকের সামনে সেগুলো গণনা করছে। নির্ভরযোগ্য স্বাক্ষী কিন্তু পাচ্ছি। তারা কিন্তু স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাক্ষ্য প্রদান করছে। জনগণ যদি পুলিশের পাশে এসে সহযোগিতা করে তাহলে মাদক দমনে অনেক এগিয়ে যাবো।
*সমুদ্রকন্ঠ- আপনার পুলিশের বর্তমান জনবল নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট কি না?
*পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান- ঁজনবলের জেলা ক্যাটাগরি আছে। সেই ক্যাটাগরি অনুযায়ী জনবলের সিংহভাগ আমি পেয়েছি। বদলীজনিত এবং প্রেষণে কিছু সদস্য অন্যখানে নিয়োজিত থাকে।
তবে জনবল বেশী হলে কাজের সুবিধা।
*সমুদ্রকন্ঠ- আপনি বলেছেন জনগণের সহযোগিতা পেলে আপনাদের কাজ করতে সুবিধা হবে। সেক্ষেত্রে আপনি জনবান্ধব পুলিশের জন্য কি করবেন?
*পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান- পারস্পরিক বিশ^াস,আস্থা এবং সেবাকে গুরুত্ব দিচ্ছি। থানায় সেবা প্রার্থী যারা আসেন তারা সরাসরি পুলিশের সাথে দেখা করতে পারছেন। কোনো দালাল-তদবিরবাজদের স্থান নেই।
কোনো অপরাধের কথা জানলেই দ্রুত হাজির হচ্ছি। সেবাভিত্তিক কার্যক্রম যেমন-আমরা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ দিচ্ছি,পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন করছি। চাকরির ভিআর করে দিচ্ছি। কোনো ধরণের হয়রানী ছাড়াই। আমি নিজে জনগণকে সাক্ষাত দিচ্ছি। আমি নিজে তাদেরকে সচেতন করছি। সম্প্রতি বিট পুলিশিং করে আমরা মানুষের দোরগোড়ায় চলে গেছি।আশাকরি এর মাধ্যমে পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা আরো বাড়বে।
*সমুদ্রকন্ঠ- সুনির্দিষ্টভাবে যদি বলেন,আপনার পুলিশ কক্সবাজারের মানুষের সাথে কি ধরণের আচরণ করবে?
*পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান- সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে অবশ্যই সৌজন্যমূলক আচরণ করবে। আমরা কি? আমরা হলাম জনগণের চাকর। জনগণ হলো দেশের মালিক। সুতরাং মালিকের সাথে তো অবশ্যই সেই ধরণের ব্যবহার করতে হবে। আমাদের নির্দেশ আছে,থানায় যদি কোনো পাবলিক আসে,সেবাপ্রার্থী আসে,তাকে সালাম দিতে হবে। তার সাথে সৌজন্যমূলক ব্যবহার করতে হবে। সেন্ট্রি-কনস্টেবলকে আমরা ওইভাবে বলে দিচ্ছি। আমাদের ইনসার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার আছে এখানে। সেখানে নিয়মিত প্রশিক্ষণ হয়। সেখানে প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তু আছে,জনগণের সাথে পুলিশের ব্যবহার কেমন হবে? কি ধরণের আচরণ আমরা করবো? সেবাপ্রার্থীদের সাথে আমাদের আচরণের ভিত্তি হলো,সৌজন্যমূলক আচরণ। তাকে প্রথমেই আমরা সালাম বিনিময় করছি। ডিউটি অফিসারের কাছে তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাকে বসানো হচ্ছে।এবং অফিসার ইনচার্জ তাকে সময় দিচ্ছেন। তাতেও সন্তুষ্ট না হলে আমার দরজা সব সময় খোলা। আগত ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান যেমনই হোক না কেনো আমার সামনের চেয়ারগুলোতে তাদেরকে বসাই। আমরা মানুষকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করি। যদি সমাধান দিতে না পারি,তাহলে পরামর্শ দেই যে,আপনাকে ওমুক দপ্তরে যেতে হবে।
*সমুদ্রকন্ঠ- একজন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে কক্সবাজারের মানুষের কাছে আপনার চাওয়া কি?
*পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান- সমাজে বেশীরভাগই মানুষই হলো শান্তিপ্রিয়। তাদের মনোভাব হলো সহযোগিতার মনোভাব। সাধারণ মানুষের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, সহযোগিতা করুন। তথ্য দিন।
ত্রিপল নাইন নাম্বারে ফোন করে ফৌজদারী অপরাধ সম্পর্কিত তথ্য দিন।
তাহলে অপরাধ দমন সহজ হবে। সমাজ অপরাধমুক্ত হবে।
*সমুদ্রকন্ঠ- ধন্যবাদ কক্সবাজারের সম্মানিত পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান। আমাদেরকে দীর্ঘক্ষণ সময় দিলেন।দৈনিক সমুদ্রকন্ঠ ও কক্স টিভির পক্ষ থেকে আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
*পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান- ধন্যবাদ দৈনিক ও সমুদ্রকন্ঠ ও কক্স টিভিকে আমার অফিসে আসার জন্য এবং আমার সাক্ষাতকার গ্রহণ করার জন্য। আসসালামু আলাইকুম।
Discussion about this post