নোয়াখালীর ছোট্ট দ্বীপ ভাসানচর। এই চরে এখন জীবনের আবহ। কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে এসে প্রথম রাতটা স্বস্তির সঙ্গে নিরাপদে কাটিয়েছে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটি।
কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটির বেশ কয়েকজন শনিবার এ অনুভূতির কথা জানিয়েছেন।
কক্সবাজারে ১৭ নম্বর শিবিরের বাসিন্দা ছিলেন আরোফা ও মো. রফিক। আরোফা এই প্রতিবেদককে জানালেন, পাহাড়ের গায়ে থাকার সময় মেয়ে রাফিয়াকে নিয়েই ছিল এই দম্পতির একমাত্র দুঃশ্চিন্তা। একটাই শঙ্কা, কবে না তিন বছরের বাচ্চা গড়িয়ে পড়ে হাত-পা ভেঙে ফেলে। ভাসানচরের সমতলে থাকার সুযোগ পেয়ে তা হাতছাড়া করেননি এই দম্পতি। তবে কক্সবাজার শিবিরে সাহায্য সংস্থার হয়ে দিনমজুরের যে কাজ করতেন, তাঁর স্বামী এখানেও সেটা পাবেন বলে জানালেন।
রোহিঙ্গাদের আবাসস্থলের আশপাশ ঘুরে দেখা গেছে, আনন্দময় কাটছে তাদের নতুন আবাস। সকাল থেকে এদিক–সেদিক ছোটাছুটি আর খেলায় মশগুল শিশুরা।
ভাসানচরে ঘুরে দেখা গেছে, শুক্রবার এখানে আসা ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গার সবাইকে রাখা হয়েছে কাছাকাছি। এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য ১২০টি গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১ হাজার ৪৪০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি ঘরে আছে ১৬টি কক্ষ, সামনে আটটি, পেছনের দিকে আরও আটটি।
রান্নার জন্য প্রতি আটটি পরিবারের জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গায় আটটি চুলা আছে। আর প্রতি আটটি কক্ষের জন্য তিনটি শৌচাগার এবং দুটি গোসলখানা রয়েছে।
কুতুপালং শিবিরের সরওয়ার এসেছেন স্ত্রী আর দুই সন্তানকে নিয়ে। তাঁর আশা, নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দের হবে তাঁদের ভাসানচরের জীবন।
ভাসানচরে ২০ শয্যার হাসপাতালে ব্রিফিংয়ের আয়োজন করেছে আশ্রয়ণ ৩ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। করিডরে ঢোকার মুখে দেখা গেল, দুই নারী বেঞ্চে বসে আছেন। হাসপাতালে আসার কারণ জানতে চাইলে লাইলী আর জুবেদা জানালেন, বাচ্চারা খেলায় মশগুল, এই ফাঁকে দেখতে এলেন হাসপাতালের চিকিৎসার আয়োজনটা কেমন। কুতুপালং শিবিরের মাবিয়া এসেছেন স্বামী ইউসুফ আর এক বছরের ছেলে ফয়সালকে নিয়ে। ২০ পেরুনো এই তরুণীর নতুন জীবনের শুরু কক্সবাজারে। আর এই পর্বে ভাসানচরে থাকতে চান রাখাইনে ফেরার আগ পর্যন্ত।
॥ ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করছে জাতিসংঘ ॥
জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সংস্থাটির আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো।
শনিবার (৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
মিয়া সেপ্পো বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে জাতিসংঘ। তবে তাদের মিয়ানমারে পাঠানোই সঠিক সমাধান।’
ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর প্রসঙ্গে জাতিসংঘ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কক্সবাজার থেকে বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত ভাসানচরে প্রারম্ভিক স্থানান্তরের কাজ কিছুদিনের মধ্যে শুরু করার সম্ভাবনাবিষয়ক কিছু প্রতিবেদন সম্পর্কে জাতিসংঘ অবগত আছে। স্থানান্তরের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমে অথবা শরণার্থীদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। স্থানান্তরের সার্বিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জাতিসংঘের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য নেই।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার বিরোধিতার মধ্যেও শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) প্রথম ধাপে ১ হাজার ৬৪২ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পাঠানো হয়েছে।
দেশের ৬৫১ তম থানা কক্সবাজারের ‘ঈদগাঁও’
সমুদ্রকন্ঠ রিপোর্ট ॥ কক্সবাজার সদর উপজেলার পাহাড় ও উপকূল বেষ্টিত বৃহত্তর ঈদগাঁওকে আলাদা থানা ঘোষণা করা হয়েছে। ঈদগাঁওর পাঁচ ইউনিয়নের...
Read more