ঘরে-বাইরে চাপের মুখে পড়েছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। দেশটির সেনাবাহিনীর আরও দুই নেতার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে। আর দেশের মধ্যে দিন দিন বড় হচ্ছে জান্তা সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। খবর এএফপির।
যুক্তরাষ্ট্র স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার রাতে মিয়ানমারের বিমানবাহিনীর প্রধান মং মং কিয়াও ও জান্তা সরকারের লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোয়ে মিন্ট টানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে থাকা তাঁদের সম্পদ জব্দ ও তাঁদের দেশটিতে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
মিয়ানমারে বিক্ষোভকারী, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের ওপর হামলা বন্ধ করতে জান্তা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তিনি বলেন, ‘যারা সহিংসতা ঘটাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিতে আমরা দ্বিধা করব না।’ সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে আটক ব্যক্তিদের মুক্তি ও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিও জানিয়েছেন তিনি।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইংসহ শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে এর আগেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ইইউর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের পর এক বিবৃতিতে জানানো হয়, মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে ইইউ। এর কয়েক ঘণ্টা পরই যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয়।
মিয়ানমারের অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স বলছে, সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে ৬৮০ জনের বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে। দেশটিতে প্রতি রাতেই ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হচ্ছে।
জান্তার হুমকি উপেক্ষা করে গতকাল মিয়ানমারজুড়ে আবারও বড় বিক্ষোভ হয়েছে। এতে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন। বড় বিক্ষোভ হয়েছে দেশটির রাজধানী নেপিডো, বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন ও দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে। দেশ অচল করে দিতে এদিন বিক্ষোভকারীরা সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেন। এর আগে বিক্ষোভকারীদের হুঁশিয়ারি দেওয়া জান্তা সরকারের এক বিবৃতি প্রকাশ করে দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল এমআরটিভি। ওই সংবাদ প্রচারের পর এমআরটিভির ফেসবুক পেজ বন্ধ করে দেয় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
মিয়ানমারে গত নভেম্বরে সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। ওই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশটির ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। আটক করা হয় এনএলডির নেতা অং সান সু চিসহ দলের শীর্ষ নেতাদের। সেই থেকে রাজপথে বিক্ষোভ চলছে। এ পর্যন্ত এই বিক্ষোভে তিনজনের প্রাণহানি হয়েছে।
মিয়ানমারে বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়নের নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
Discussion about this post