মাসুদ আখন্দ ॥
বহুল আলোচিত The Kashmir Files দেখলাম। কাশ্মীরের মুসলমানদের সত্যিকার অর্থেই পিশাচ বানিয়ে দেখিয়েছে সিনেমাটি। সম্পূর্ণ সিনেমাটিতে একজন মুসলমান চরিত্রকেও মানবিক রূপে দেখানো হয়নি! সব পিশাচ! আসলেই কি বাস্তবতা এমন? আমার মনে হয় না। সম্ভবত মুসলমানদের প্রতি নির্মাতা Vivek Agnihotri কোন ব্যক্তিগত ঘৃনা অনেক দিন ধরে লালন করছিলেন। সুযোগ পেয়ে প্রচন্ড ভাবে সেই ঘৃণা বমি করে দিয়েছেন তার পর্দায়। ভারতের বিশাল এক অংশ সেই বমিতে মাখন লাগিয়ে খাচ্ছে এবং অন্যকে খেতে উৎসাহিত করছে।
কাশ্মীরের মুসলমানদের নিয়ে কি পরিমান মিথ্যাচার তিনি করেছেন সেই সত্য সময়ের সাথে বেরিয়ে আসবে। আমি শুধু তার একটা বক্তব্যের মিথ্যা ধরিয়ে দিবো বলে এই লেখা লিখছি। তিনি বলছেন কাশ্মীর তথা ভারতবর্ষে ইসলাম প্রতিষ্ঠা পেয়েছে তরবারী দিয়ে। এই কথা মিথ্যা। আমার এই লেখা ভুল ভাবে নিবেন না যে আমি কাশ্মীরের পন্ডিতদের প্রতি যে অবিচার হয়েছিল সেটাকে সমর্থন করছি।
ভারতে ধর্ম বলে আদতে যা বাকি দুনিয়া বুঝে সেটার কোন অস্তিত্ব ছিল না। ধর্ম বলতে আজ যে শব্দের ব্যবহার আমরা দেখি সেটা আসলে ছিল স্বভাব সম্পর্কিত। যেমন আগুনের ধর্ম পোড়ান অথবা পানির ধর্ম ভেজানো। পৃথিবীর সব দেশেই সামাজিক যে বন্ধন তার জন্ম পরিবার থেকে। তারপরেই আসে ট্রাইব বা কমিউনিটি। এই কমিউনিটি গুলো শুরু হয়েছিল বিভিন্ন ধরণের ধর্মীয় বিশ্বাস নির্ভর অথবা পেশা নির্ভর। ভারতবর্ষে ছিল পেশা নির্ভর। আর সেখান থেকেই জাতির জন্ম। যেমন কামড়, কুমার, তাঁতি, জেলের মত হাজার হাজার ভিন্ন ভিন্ন জাতির দেশ ছিল ভারত এবং এই জাতি শুধু দুইটা বিষয় অন্য জাতির সাথে শেয়ার করতো না। খাদ্য ও কন্যা অর্থাৎ ভিন্ন জাতীর সাথে বিয়ে হতো না এবং ভিন্ন জাতির খাওয়া তারা খেত না।
সময়ের বিবর্তনে এই জাতী গুলোর মাঝে ছোট জাত এবং বড় জাত নির্ণয় করে কিছু সমাজপতি/পণ্ডিত। প্রধানত চারটি জাত. সৃষ্টি করে তারা। যেমন, ব্রাহ্মণ: বৈদ্য/বৈদিক পণ্ডিত, পুরোহিত এবং শিক্ষক পেশার মানুষ। এরা নিজেদের ভগবানের অংশ দাবী করে। জাতের মাঝে ছোট বড় নির্ণয় যারা করেছিল তারা সবাই এই ব্রাহ্মণ ছিল এবং কেন সেটা বুঝতে নিশ্চয়ই কারো কষ্ট হচ্ছে না? এরপরেই আসে ক্ষত্রিয় অর্থাৎ শাসক, যোদ্ধা এবং বিভিন্ন প্রশাসক। বলা হয় এরা এসেছে ভগবানের কাঁধ থেকে। তারপর বৈশ্য, যারা ব্যাবসায়ি বা কৃষক। এদের মনে করা হয় তারা এসেছে ভগবানের পেট থেকে। এবং সব শেষ শূদ্র যারা এসেছে ভগবানের পা থেকে। উপরোক্ত পেশা ব্যতিত বাকি সকল শ্রমিক ও সেবা প্রদানকারী মানুষ ছিল শূদ্র।
এই ছোট বড় জাতের মাঝে বৈষম্য এতো বেশী ছিল যে প্রায়ই নিন্ম জাত হিসাবে যারা পরিচিত ছিল অর্থাৎ শূদ্ররাই ধর্ম পরিবর্তন করেছে বা করতে বাধ্য হয়েছে। প্রথম ধাপে তারা বৌদ্ধ হয়েছে এবং পরে যখন মুসলমানরা এলো তখন ইসলাম গ্রহণ করলো। ভারত বর্ষের মুসলমানের আসল আদি পরিচয় নিপীড়িত নিন্মবর্ণের হিন্দু। সেই নিপীড়নের নমুনা আজও আছে যা দলিত হিসাবে পরিচিত। আর দলিত নির্যাতনের খবর নিশ্চয়ই কারো অজানা নয়।
কাশ্মীরের যা সমস্যা তা ভারত পাকিস্তানের ভুরাজনৈতিক সমস্যা। পাকিস্তান এতদিন ধর্মকে ব্যবহার করেছে সেই রাজনীতির খেলায় জেতার জন্য আর আজ The Kashmir Files সিনেমা দিয়ে নির্মাতা Vivek Agnihotri সেই নোংরা খেলা শুরু করলেন। এই সিনেমা ভারতে মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা শুধু বৃদ্ধিই করবে। মোদী ক্ষমতা নেয়ার পরে মুসলমানেরা যেভাবে নিপীড়িত হয়েছে Vivek Agnihotri সেটাকে জায়েজ করার চেষ্টা করছেন তার সিনেমায়। আমার সব থেকে খারাপ লেগেছে বাংলার সন্তান মিঠুন চক্রবর্তীকে এই ঘৃণা ছড়ানোর খেলা খেলতে দেখে। লোকটাকে আমি পছন্দ করতাম!
–
মাসুদ আখন্দ, সুইডেন প্রবাসী নির্মাতা
Leave a Reply