চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের লোহাগাড়ায় ড্রাম ট্রাকের চাপায় পাঁচ কারযাত্রী বন্ধুকে ‘পিষে মারা’ সেই ট্রাক চালককে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব ৭।
লোহাগাড়া থেকে মঙ্গলবার দুপুরে তাকে গ্রেপ্তার করার বিষয়টি সিভয়েসকে নিশ্চিত করেন র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়ায় ট্রাক ও প্রাইভেটকারের মুখোমুখি সংঘর্ষে পাঁচ ছাত্র নিহতের ঘটনায় ঘাতক ট্রাক ড্রাইভার মো. রিপনকে আটক করেছে র্যাব।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) বিকাল সাড়ে তিনটায় ডবলমুরিং থানার রশিদ বিল্ডিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে র্যাব-৭ এর একটি দল।
জানা যায়, আটক রিপন ২০০৪ সালে চট্টগ্রামে আসেন। তারপর নিমতলা বিশ্বরোড এলাকায় বসবাস শুরু করেন। সেখান থেকে কাজ নেন গাড়ির হেলপারের। ২০০৪ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত গাড়ির হেলপারের দায়িত্ব পালন করেন। এরমধ্যে ২০০৬ সালে গাড়ি চালানো শিখতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। এতে মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তার ডান পা পঙ্গু হয়ে যায়। পরে ২০১৫ সালে ভারী যানবাহন চালানোর জন্য বিআরটিএতে লাইসেন্সের আবেদন করেন। তার ডান পা পঙ্গু হওয়ায় বিআরটিএ তাকে হালকা যানবাহনের লাইসেন্স দেয়। কিন্তু লাইসেন্স না থাকার শর্তেও সে ভারী যানবাহন চালিয়ে আসছিল।
আটক মো. রিপন (৩১) ভোলা জেলার লালমোহন থানার মহেশখালী এলাকার মৃত মোজাম্মেল হকের ছেলে।
দুর্ঘটনার পর পলাতক ছিলেন ঘাতক ট্রাক ড্রাইভার রিপন। তাকে আটক করতে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে র্যাব। একপর্যায়ে তিনি নগরের ডবলমুরিং থানার রশিদ বিল্ডিং এলাকায় আত্মগোপন করছে౼এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে র্যাব।
বিষয়টি নিশ্চিত করে র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নূরুল আবছার বলেন, লোহাগাড়া আধুনগর এলাকায় প্রাইভেটকার ও বেপরোয়া গতির ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় ঘাতক ট্রাক ড্রাইভার রিপনকে ডবলমুরিং থানার রশিদ বিল্ডিং এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে। তার ভারী যানবাহন চালানোর অনুমতি ছিল না। তার ডান পা পঙ্গু হওয়ায় শুধু হালকা যানবাহন চালানোর অনুমতি ছিল। কিন্তু সে দীর্ঘদিন ধরে ভারী যানবাহন চালিয়ে আসছিল।
তিনি আরও বলেন, রিপন গত সোমবার পেকুয়া মেরিন ড্রাইভ ও চার লেইন সড়ক নির্মাণের জন্য পাথর আনলোড করে ফিরছিলেন। এরমধ্যে বেপরোয়া গতিতে ট্রাক চালিয়ে আধুনগর এলাকায় পৌঁছালে কক্সবাজারমুখী প্রাইভেটকারটিকে ধাক্কা দেয়। এতে কারটি থেমে যায়। পরে রিপনের ডান পা পঙ্গু হওয়ায় ব্রেক করতে না পারায় ট্রাকটি পুরোপুরি প্রাইভেটকারের ওপর উঠে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত হন। অপরজন হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান। আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
এরআগে সোমবার (২১ মার্চ) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের আধুনগর বাস স্টেশনের দক্ষিণ দিকে ট্রাক-কারের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। আর এতেই ট্রাক চাপায় দুমড়ে মুচড়ে যায় প্রাইভেটকারটি। ঘটনাস্থলেই মারা যান চারজন। একই ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে নেয়ার পর আরেকজনের মৃত্যু হয়।
নিহতরা হলেন— লোহাগাড়া আমিরাবাদ জাকোয়াবির পাড়া এলাকার মৃত নাছির উদ্দিন বাবুর ছেলে আইনজীবী হারুনর রশিদ হীরণ (২৬), চুনতি মেহেরুন্নিছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার আবদুল মাজেদের ছেলে মুহাম্মদ হুমায়ুন (২৫), সাতকানিয়া পৌরসভার ছমদার পাড়া নওশের আলীর ছেলে খোরশেদ আলী সাদ্দাম প্রকাশ সাজিদ খান (৩১), চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ২৫ নং ওয়ার্ড এলাকার মো. ফারুক হাসানের ছেলে রিজভী শাকিব (২৬) ও অলংকার শহীদ নগর এলাকার ছালামত আলীর ছেলে মনছুর আলী (২৩)।
Leave a Reply