নিজস্ব প্রতিবেদক::
কক্সবাজার সদরের পিএমখালীতে মোরশেদ আলী ওরফে বলী মোর্শেদকে পৈশাচিকতায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চার আসামিকে আটক করলেও হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহনকারি দাগি আসামীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যার ঘটনা ঘটলেও ঘটনায় জড়িত মূল আসামিরা আত্মগোপন করেছে বলে দাবি করছে প্রশাসন। ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী সাবেক ইউপি সদস্য মাহমুদুল হক, সদর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক আবদুল মালেক, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা আলাল, জয়নাল আবেদীন হাজারী, সদর আওয়ামী লীগ নেতা তাহেরুল ইসলাম, কলিম উল্লাহ মোঃ সাহিন কথিত সাংবাদিক মতিউল ইসলাম, থানার দালাল অঘোষিত ওসি মাহমুুদুল করিমসহ দাগি আসামীদের আটক করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অসহায় মুরশেদ আলীর পরিবার।
হত্যাকাণ্ড কি ৬ দিন অতিবাহিত হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে হত্যাকারীরা। ফলে পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। মামলার মোড় রাজনৈতিক রুপ নিলে প্রকৃত আসামীরা পার পেয়ে যাবে বলে দাবি মুরশেদ আলীর পরিবারের। ঘটনার অকাট্য প্রমান থাকলেও পুলিশ ৩ জন ছাড়া আসল আসামীদের এখনো ধরতে পারেনি। মুরশিদ আলীর জানাজা এবং প্রতিবাদ সভায় রাজনৈতিক নেতারা নানা আশ্বাস দিয়ে একে অপরকে দোষারোপ করে বক্তব্য দিয়ে রাজনৈতিক রুপ দিলে ঘটনার আসল আসামীদের আটক সুদূর পরাহত হবে বলে মনে করেন হতভাগ্য মুরশেদ আলীর পরিবার।
মুরশেদ আলীর খালু, বাংলাবাজার এলাকার আলী আহমেদ কোম্পানি জানান, মুরশেদ আলীকে যারা পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করেছে তাদের সবার পরিচয় সিসিটিভির ফুটেজে আছে। স্পষ্ট এবং ভাইরাল হওয়া ঘটনায় জড়িতরা চিহ্নিত সন্ত্রাসী। কিন্তু কয়েকটি মিডিয়ায় কয়েজনকে বিশেষ করে কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মোহাম্মদ আলী নাম আনা দূঃখজনক।পাশাপাশি কয়েকটি পত্রিকায় সদর আওয়ামী লীগের মোহাম্মদুল করিম মাদুর নামও আসছে। আমরা পরিবার থেকে তাদের নাম না আনলেও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নাম আনলে সঠিক বিচার পাওয়া আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। ছৈয়দ মোহাম্মদ আলীর পরিবারের যাদের সম্পৃক্ততা আমরা পেয়েছি তাদের মামলায় আসামি করেছি কিন্তু ছৈয়দ মোহাম্মদ আলীকে কোন ঘটনায় জড়িত থাকার তথ্য আমরা পায়নি।এটাকে নিয়ে রাজনীতি না করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি মুরশেদ আলীর পরিবারের পক্ষ থেকে। আমরা প্রকৃত খুনিদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি প্রশাসনের কাছে।
মুরশেদ আলীর আত্মীয় আবুল কালাম জানান,মুরশেদ হত্যার ঘটনার দিন রাতে আমি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করি। তিনি নানা গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেন এবং মুরশেদ আলী হত্যায় জড়িতদের বিষয়ে ছাড় না দেয়ার কথা জানান। তাৎক্ষনিক ভাবে প্রশাসনকে ঘটনার বিষয়ে অবহিত করেন। মামলাটি পুলিশ সর্বোচ্চ দায়িত্ব নিয়ে তদন্ত করছে। যারা আসামি হয়েছে তাদের ভিডিও ফুটেজ আছে, সরাসরি দিনেদুপুরে হত্যা করা হয়েছে মুরশেদকে সেহেতু এটি কোন ভাবেই লুকানো যাবেনা। এখানে এলাকার অনেক পরিচিত মানুষের নাম আলোচিত হচ্ছে। আমরা চাই কোন নিরীহ মানুষ যেন মামলায় কষ্ট না পায়। মিডিয়ায় মাদু ভাই কিংবা আলী ভাইয়ের কথা বলাবলি হচ্ছে কিন্তু আমরা পরিবার থেকে কাউকে অভিযুক্ত করিনি। সেটির কারনে যেন প্রকৃত আসামীরা যেন রেহায় না পায়।
এদিকে ঘটনায় জড়িত সদর আওয়ামী লীগের ৪ জনকে সদর আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে লে জানিয়েছেন সদর আ.লীগের আহ্বায়ক মাহমুদুল করিম মাদু, যুগ্ন আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন, ছৈয়দ রেজাউর রহমান রেজা, টিপু সুলতান। দলীয় প্যাডে সই করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন তারা।
এর আগে মোর্শেদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আব্দুল মালেককে প্রধান আসামি করে ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করার কথা জানায় পুলিশ। বাকি তিনজন হলেন জয়নাল আবেদীন, আবু তাহের ও সিরাজুল মোস্তফা আলাল।
কক্সবাজার জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমান বলেছেন, ‘প্রকাশ্যে মোর্শেদ বলিকে হত্যা অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সে কারণে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। তার দায়ভার তো সদর আওয়ামী লীগ নিতে পারে না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৪৭ ধারায় তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা আওয়ামী লীগ করার কোনো সুযোগ নেই, এটি দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ। এ দলে ভূমিদস্যু, চাঁদাবাজ, হুকুম দখল-খারাপ মানুষের জায়গা নেই।’
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) আছর নামাজের সময় ইফতার অনুষঙ্গ কিনতে চেরাংঘর বাজারে আসেন মোরশেদ আলী। তখনই সেখানে আগে থেকে উৎপেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় পৈশাচিকতা চালায়। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর রাত ৮টার দিকে আইসিইউতে তার মৃত্যু হয়। সৌদি প্রবাসী মোরশেদ বেড়াতে দেশে এসেছিলেন। তিনি এলাকায় ‘অন্যায়ের প্রতিবাদকারী’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। দেশে ঘুরতে আসলে গ্রামের ঐতিহ্যবাহী বলীখেলায় শখের বসে অংশগ্রহণ করতেন বলে তাকে মোরশেদ বলী নামে ডাকা হতো।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিল্ডিং ভাঙার কাজে ব্যবহৃত বিশালাকার হাতুড়ি দিয়ে প্রথম আঘাতে মাটিতে পড়ে যান মোরশেদ। ঘটনার আকস্মিকতা উপলব্ধি করতে পেরে হামলাকারীদের বলছিল- ‘আমি রোজায় বেশি ক্লান্ত, ইফতারের সুযোগ দাও, মারতে চাইলে ইফতারের পর মারিও।’
কিন্তু রোজাদার বলার আকুতিও তাদের দমাতে পারেনি। শেষ রক্ষা হয়নি প্রয়াত শিক্ষক ওমর আলীর ছেলে মোরশেদ আলী ওরফে বলী মোরশেদের।
হত্যা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বাংলাবাজার এলাকার আলী আহমদ কোম্পানি জানান, বাজার করতে চেরাংঘর বাজারে পৌছার একটু পরে শোরগোল শুনতে পান। ঘটনাস্থলের কাছাকাছি গেলে পিএমখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন হাজারিকে বলতে শোনা যায়, ‘উপরের নির্দেশে তারে (মোরশেদ) মেরে ফেলা হচ্ছে, কেউ সামনে আসবে না। যারা আসবে তাদেরও অবস্থা খারাপ হবে।’
Leave a Reply